আজ || শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
শিরোনাম :
  জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে গোপালপুরে বিনামূল্যে টীকা পাবে সাড়ে নয় হাজার কিশোরী ও যুবতী       রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলীর দাফন সম্পন্ন       গোপালপুরে অগ্নি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ       গোপালপুরে শিশু ধর্ষন অপচেষ্টা; ভিক্টিমের বাড়িতে প্রাণনাশের হুমকিতে আদালতে প্রসিকিউশন       গোপালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইসচেয়ারম্যান লতিফ সিটি আর নেই       প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ       গোপালপুরে দৈনিক মজলুমের কন্ঠ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত       গোপালপুর হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা; থানায় মামলা       গোপালপুর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি খন্দকার আব্দুস সাত্তার আর নেই       গোপালপুরে শিশু ধর্ষণচেষ্টা: বাদীকে স্কুল কমিটির সভাপতি ও আইনজীবীর হুমকি    
 


পাঁচ বছরে পর্দাপণ মহাজোট সরকারের

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার চার বছর অতিক্রম করে পাঁচ বছরে পা রাখলো।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার যাত্রা শুরু করে। নানা সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যে চার বছর পার করেছে সরকার। তাদের সাফল্য-ব্যর্থতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশের খাতা খুলে বসেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সুশীল সমাজসহ দেশের মানুষ।

মহাজোট সরকারের চার বছরে মানুষের আশাভঙ্গ হয়নি, তবে আত্মতুষ্টিরও তেমন সুযোগ নেই। সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ করলে গত চার বছরে এই সরকারের সফলতার পাল্লা ভারি, তবে ব্যর্থতার পাল্লা কম হলেও গুরুত্বহীন নয়। সর্বশেষ মেয়াদের এই শেষ বছরে বিগত সময়ের ব্যর্থতাগুলো কতটুকু সামলিয়ে জনগণের প্রত্যাশা ও সমর্থন এ সরকার ধরে রাখতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। চার বছর পেরিয়ে সরকারের মেয়াদের শেষবর্ষে পদার্পণ করলেও তীর থেকে প্রত্যাশার তরী এখনো অনেকটাই দূরে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান কমেনি।

চার বছর পেরিয়ে সরকারের মেয়াদের শেষবর্ষে পদার্পণ করলেও প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান কমেনি। রাজনীতির সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তন শূন্যের কোঠায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে দেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা ও সমর্থন ব্যক্ত করলেও গত বছরে পদ্মা সেতু, হলমার্কসহ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকারের বিশাল সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ করলে চার বছরের এই সরকারের পাল্লা সফলতায় ভারি, তবে ব্যর্থতার পাল্লা কম হলেও গুরুত্বহীন নয়। মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। তবে তা দুস্তর নয়।

তবে মেয়াদের চার বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্বের বরফ এতটুকুও গলেনি। বরং সময়ের ব্যবধানে ক্রমাগত বাড়ছে। তবে মেয়াদের শেষ বছরে দেশের মানুষের কাছে একটি প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে? অন্তর্বর্তীকালীন দলীয়, নাকি নির্দলীয় সরকারের অধীনে? সকল দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, নাকি একপক্ষের নির্বাচন হবে?

বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর ইস্যু এবং বেশকিছু বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকার তার মেয়াদের শেষবর্ষে পা রাখলো। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম শক্ত হাতে টেনে ধরা, জনগণের আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা, বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে আরও স্বাবলম্বী করা, বিপর্যস্ত পুঁজিবাজারকে রক্ষা, রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবিলা এবং আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে-দলীয় সরকারের অধীনে, নাকি পূর্বের ন্যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে-এসব চ্যালেঞ্জ এই এক বছরেই মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চার বছরের সরকার জোরগলায় বেশকিছু সাফল্যের কথা বলতেই পারে। যেমন-কৃষি, শিক্ষা, কূটনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতি। মাত্র চার বছরেই কৃষি ও শিক্ষাক্ষেত্রে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছে মহাজোট সরকার। স্বাধীনতার ৩৯ বছরের মাথায় সার্বজনীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বছরের শুরুতেই প্রায় ২৭ কোটি বিনামূল্যে বই বিতরণ, প্রাথমিক ও জুনিয়র সমাপনী পরীক্ষার প্রবর্তন, দীর্ঘদিন পর শিল্পনীতি প্রণয়ন, সন্ত্রাস-ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল এবং আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে বাংলাদেশের সমপরিমাণ গভীর সমুদ্রে বিশাল অঞ্চল আদায়কে রীতিমত বিপ্লবের ঘটনা সরকারের বড় দাগের সাফল্য হিসাবেই দেখছেন তারা।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ক্ষমতায় গেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। মহাজোট সরকার দুই বছরের সূচনাপর্বেই সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে। কিছুটা দেরিতে হলেও ক্ষমতার মাঝামাঝি অবস্থায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপর্ব শুরু করেছে। বিশ্বমন্দার মধ্যেও গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনয়নেও অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে, জনশক্তি রফতানিতেও প্রশংসা অর্জন করেছে সরকার। মাত্র চার বছরে ১৯ লাখ ৭৮ হাজার শ্রমিকের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মহাজোট সরকারের চার বছর কার্যপরিচালনায় সফলতার পাল্লা ভারি হলেও ব্যর্থতার পাল্লাও খুব একটা কম নয়। ২০০৯ নালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘চমকের মন্ত্রিসভা’ শপথ নিয়েছিল আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা জাগিয়ে। তার অনেক কিছুই অপূর্ণ রয়ে গেছে চার বছর মেয়াদে। তারা বর্তমান মহাজোট সরকারের চার বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে চিহ্নিত করেছেন- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির অভিযোগ, পদ্মা সেতু নির্মাণে জটিলতা, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, দলীয় কর্মীদের টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস, সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি।

চার বছর পূর্তির প্রাক্কালে আরেক দফা তেলের দাম বৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো অবস্থা হয়েছে। শেষ সময়ে এই জ্বালানি তেলের মূল্যে বৃদ্ধি সরকারকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দ্রব্যমূল্যের দাম আরো বাড়বে। দ্রুত এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সরকারের বিশাল জনসমর্থন ধরে রাখাই কঠিন হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মহাজোট সরকারের আরেকটি বড় ব্যর্থতা হচ্ছে দেশব্যাপী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্তের বেপরোয়া দুর্বৃত্তপনা। চার বছর ধরেই এদের কারণে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ক্ষমতায় গেলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা; কিন্তু তা হয়নি। রাজধানীর অসহনীয় যানজট নিরসনে ব্যর্থতার অভিযোগও সরকারের দিকে। যানজট নিরসনে উড়াল সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা পাতাল রেল ইত্যাদি নির্মাণের নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও একমাত্র সায়েদাবাদ-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া ছাড়া বাকি কাজগুলোর কিছুই হয়নি।

আওয়ামী লীগ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিন হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রীডে যোগ করেছে। প্রায় ৫৫টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে গেল চার বছর। মাথাপিছু বিদ্যুত্ ব্যবহার ২২০ কিলোওয়াট থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬৫ কিলোওয়াট। একই সাথে সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৩ শতাংশ। ২০১২ সালের অগস্ট মাসে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ছয় হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হয়। যা ছিল রেকর্ড। তবে এই সাফল্য ম্লান হয়ে গেছে বার বার বিদ্যুত্ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোতে। ভাড়ায় আনা বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলো চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

এ সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি করা। সরকার এই অঙ্গীকার পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে। খাদ্য গুদামগুলোতে রেকর্ড ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। সারাদেশে ২ লাখ ১৯ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির পরিধি ও বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি ১৭ লাখে উন্নীত হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে ৭৭ লাখ পরিবারের মধ্যে ফেয়ার প্রাইস কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গার জনপদ উত্তরবঙ্গে আজ মানুষ দুই বেলা পেটভরে খেতে পাচ্ছে।

২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে জাতীয় পর্যায়ে শিশুমৃত্যুর হার হরাস সংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ জাতিসংঘ এমডিজি পুরস্কার লাভ করেছে। স্বাস্থ্য খাতের গুণগত উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, সাউথ সাউথ নিউজ ও জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ২০১১’ প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ‘শান্তির মডেল’ উপস্থাপন করে যার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’। ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!