আজ || বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
শিরোনাম :
  গোপালপুরে অগ্নি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ       গোপালপুরে শিশু ধর্ষন অপচেষ্টা; ভিক্টিমের বাড়িতে প্রাণনাশের হুমকিতে আদালতে প্রসিকিউশন       গোপালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইসচেয়ারম্যান লতিফ সিটি আর নেই       প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ       গোপালপুরে দৈনিক মজলুমের কন্ঠ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত       গোপালপুর হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা; থানায় মামলা       গোপালপুর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি খন্দকার আব্দুস সাত্তার আর নেই       গোপালপুরে শিশু ধর্ষণচেষ্টা: বাদীকে স্কুল কমিটির সভাপতি ও আইনজীবীর হুমকি       গোপালপুরে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে মানববন্ধন       গোপালপুরে ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে করতে সহকারি শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের নোটিশ    
 


কাওরান বাজারের পথসভায় খালেদা জিয়া- ‘চোরের মায়ের কত টাকা পাচার করা হয়েছে, সেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে’

সরকারের অপশাসন থেকে আজ সবাই মুক্তি চায় উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মুক্তির এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়; সবার।

তিনি বলেন, এই সরকারকে চার বছর সুযোগ দিয়েছিলাম, তারা দেশের জন্য কিছু করে কিনা। কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয়নি। কাজের অভাবে গ্রামে-গঞ্জের মানুষ ঢাকায় আসে। এসে দেখে ঢাকায়ও কাজ নেই। সুদিন আনার জন্য আজ আন্দোলনে নামতে হবে।

বুধবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের গণসংযোগের অংশ হিসেবে কাওরান বাজারের পথসভায় এসব কথা বলেন জোটনেত্রী।

খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের কাজ না থাকলেও কাজ আছে আওয়ামী লীগের নেতাদের। তারা টেন্ডারবাজি, লুটপাট, দুর্নীতি, ভর্তিবাণিজ্য করে আরাম করছে।

তিনি বলেন, এসব দুর্নীতি উপরিমহল থেকে হচ্ছে। চুরি করে মায়ের কাছে দেওয়া হচ্ছে। চোরের মায়ের কত টাকা পাচার করা হয়েছে, সেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে। যখন হাতে তুলে দেব তখন আর পার পাবে না।

এই ভয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়তে চায় না উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, অপরাধ করে জেলে যাবেন না তা কি হয়? নিরাপরাধ মানুষ জেলে ধরছে না আর আপনারা অপরাধ করে জেলে যাবেন না, তা হবে না?

এই সরকার দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, যুবকদের আজ চাকরি নেই, বিদেশে লোক নিচ্ছে না, গার্মেন্টসে ষড়যন্ত্র করে আগুন দেওয়া হচ্ছে, শ্রমিকরা পুড়ে মরে যায় অথচ তাদের বিচার নেই। সবখানে ধস নামতে শুরু করেছে। এই সরকার থাকলে দেশের কিছুই হবে না।

জনগণকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জিজ্ঞেস করুন, পদ্মা সেতু কেন হলো না? বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতি ধরে ফেললো বলে? বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, এই প্রকল্পে টাকা দেয়া হবে না যদি দুর্নীতিবাজদের না ধরা হয়। কিন্তু কি করেছে সরকার?’

খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতি ধরতে দুদক কাজ করে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে। তারা সরকারের লোকদের দুর্নীতি দেখে না। প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন যারা পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের দেখে না।

দুর্নীতির প্রশ্রয় দেওয়া দুর্নীতি উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দুর্নীতিবাজদের না ধরে অপরাধ করছেন দুদকের কর্মকর্তারা। এর জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা এখন দুর্নীত দমন কমিশন নয়, দুর্নীতির প্রশ্রয় কমিশন।

কেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেনি- সেই প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, দুই আবুলকে বাদ দিয়েছে কেন? কারণ আবুলরা হয়তো নিজেরা টাকা নেয়নি। তারা টাকা উপরে দিয়েছে। কিন্তু কান টানলে মাথা আসবে। এজন্য তাদেরকে ধরা হচ্ছে না।

হলমার্ক, ডেসটিনিসহ আর্থিক খাতে নানা দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পুঁজিবাজারের দেড় কোটি মানুষ আর্তনাদ করেছে। কিন্তু দোষীদের ধরা হয়নি তারা সরকারের নিজেদের লোক বলে।

তিনি জনগণের কাছে জানতে চেয়ে বলেন, আপনারা কি দুর্বল? আপনারা সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রাখেন না? বিদ্যুতের দাম-গ্যাসের দাম বাড়ালে হরতাল দেওয়া হবে। আপনারা করবেন হরতাল? আমরা বলে দিতে চাই, আর দাম বাড়ানো চলবে না।

সরকার জনগণের জন্য বাংলাদেশকে শশ্মান বানিয়ে ফেলেছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার বলে, তারা দেশকে সোনার বাংলা বানিয়ে ফেলেছে। তারা সোনার বাংলা বানিয়েছে তাদের জন্য আর জনগণের জন্য বাংলাকে শশ্মান বানিয়ে দিয়েছে।

তিনি হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এসব আরাম-আয়েশ থাকবে না। আপনারা আরাম আয়েশে থাকবেন আর জনগণ খারাপ থাকবে? তা হবে না।

সরকার ভয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায় উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চায় না, কারণ তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এজন্য দরকার নির্দলীয় সরকার।

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ভালো কাজ করে থাকলে জনগণ আপনাদের নির্বাচিত করবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।

সরকার বিএনপির আন্দোলনকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা কিছু করলে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। আপনাদের ঘরে যুদ্ধাপরাধী নেই? পরিবারের লোক ধরেন, তারপর প্রমাণ করেন, আপনারা যুদ্ধাপরাধের বিচার করছেন।

আওয়ামী লীগ রঙ পাল্টাতে সময় নেয় না দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, জামায়াত নেতারা ’৯৬ সালে যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না? তাদের সাথে নিয়ে তখন বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেননি? তখন ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেননি কেন?

তিনি বলেন, ’৮৬ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমরা যখন একমত হলাম এরশাদের কোনো নির্বাচনে যাব না, তখন আপনি (শেখ হাসিনা) জামায়াতকে সাথে নিয়ে এরশাদের নির্বাচনে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের রঙ পাল্টাতে সময় লাগে না।

বিএনপিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দল উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে, এখনো করছে। সিরাজ সিকদার, সিদ্দিক মাস্টার মুক্তিযোদ্ধা ছিল না? আরো অনেক নাম বলে শেষ করা যাবে না, তাদের কারা হত্যা করেছে?

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বিএনপির মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। আপনারা তো পালিয়েছিলেন। পালিয়ে চেয়ারে বসে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না।

আওয়ামী লীগ কারো সঠিক মূল্যায়ন করতে জানে না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে এরশাদ পাকিস্তানে ছিল, সেই এখন তাদের দোসর। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের হয়ে কাজ করেছে, এরাই এখন মুক্তিযোদ্ধো।

জামায়াত নেতা গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদের সাথে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শেখ হাসিনার ভাই শেখ সেলিমের বৈঠক-কুশল বিনিময়ের ছবি দেখিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, তারা তখন যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না?

সরকার নিজেদের মতো করে বিচার ব্যবস্থা সাজিয়েছে দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আজ কোনো ন্যায়বিচার নেই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি সরকারের দুর্নীতি জানতো, তা সেসব প্রচার করতে চেয়েছিল বলে রাতের আঁধারে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আপনাদের নামে সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, আর বিএনপির ২৫ হাজার নেতা-কর্মীর নামে মামলা দিয়েছেন, এখনো নতুন নতুন মামলা দিচ্ছেন।

বিরোধী দলীয় নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, ২১ জন ফাঁসির আসামির মুক্তি দেওয়া-এই কি ন্যায়বিচার?

আমাদের মহাসচিবের নামে ময়লার গাড়ি পোড়ানোর মামলা হয়েছে কিন্তু শেখ হাসিনা হুকুমের আসামি নন? তিনি লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মারার হুকুম দেননি। গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মানুষ মারার হুকুম দেননি। এর জবাব দিতে হবে।

দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বন্দি কেন- এই প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, মাহমুদুর রহমান প্রমাণ করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠিকভাবে করা হচ্ছে না। এজন্য তিনি এখন রাষ্ট্রদ্রোহী। মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী নয়, দেশপ্রেমিক।

এই সরকারকে দিয়ে ভালো কিছু হতে পারে না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই সরকার বিডিআর বিদ্রোহ দমনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করলো শেখ হাসিনা। একজন প্রধানমন্ত্রী কি সাধারণ ক্ষমা করতে পারেন? ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা লক্ষ্য ছিল, বিডিআরের মনোবল ভেঙে দেওয়া। একে ধ্বংস করা।

খালেদা জিয়া বলেন, এদের কাছে আর বিচার চাওয়া নয়, আর চোখের পানি নয়, এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময়।

যুব সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, যুবকদের আজ দেশ রক্ষা করতে হবে। যুবকরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছে, এবার দেশরক্ষা করতে হবে, মানুষ বাঁচাতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, এজন্য নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি আমরা। কালই সংসদ অধিবেশন ডেকে সরকার তত্ত্বাবধায়ক বিল আনুক। যদি তারা ভালো কাজ করে থাকেন তবে তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করুক।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!