আজ || শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের পদত্যাগ       উত্তর টাঙ্গাইল নূরানী মাদরাসার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উদযাপন       গোপালপুরে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত       গোপালপুরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশু ও নারী নিহত       গোপালপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় সংসদ সদস্য ছোট মনির সংবর্ধিত       এ হয়রানির শেষ কোথায়! তদন্তে নির্দোষ, তবুও বন্ধ বেতনভাতা       গোপালপুরে ২০১ গম্বুজ মসজিদ চত্বরে পুলিশ বক্স স্থাপন       হেমনগর জমিদারের একাল-সেকাল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন    
 


বিজয়া দশমী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন : অন্যায়কে প্রতিহত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিন

সন্তোষ কুমার দত্ত : শারদীয় দুর্গোৎসব ১৪২৫। আজ ১৫ অক্টোবর সোমবার মহাষষ্ঠী তিথিতে প্রতিমা স্থাপন শুরু হয়ে এ উৎসব চলবে ১৯ অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত। ১৫ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠী, ১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার সপ্তমী, ১৭ অক্টোবর বুধবার মহাঅষ্টমী, ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মহানবমী ও ১৯ অক্টোবর শুক্রবার দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নানা আনুষ্ঠানিকতা ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুভ বিজয়া দশমী পালন করে থাকে। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় বিজয়া শোভাযাত্রা, ঢাক, কাঁসর, সানাই ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সাধারণত রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানে বসে মেলা, মন্দির অঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, কীর্তন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি। দেবীকে সিঁদুর পরানো, মিষ্টিমুখ করানোও হয়ে থাকে এ পর্বে। সধবা নারীরা একে অন্যের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা করেন। প্রতিবেশিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়, ধান দূর্বা ছিটিয়ে আশীর্বাদ করার প্রথা আজও বিদ্যমান। আত্মীয় স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্রদানসহ বিভিন্ন আয়োজন সংক্ষিাপ্ত পরিসরে হলেও আজো চোখে পড়ে।

হিন্দু ধর্মীয় বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসারে বিজয়া দশমীর তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু মহিষাসুরকে বধ করার পর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে এই দশমীর দিন দেবী দুর্গা বিজয়োৎসব করেন, সেহেতু দশমী বিজয়ের দিন, অন্যায়কে প্রতিহত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিন। দুর্গাপূজা তথা বিজয়া দশমী ঐক্যের প্রতীক, কারণ দেবী দুর্গা দেবতাদের সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ। বিজয়া দশমী সকল ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে দূর করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা দান করে।

বিজয়া দশমীর শিক্ষায় মায়ের ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়। এদিনে নিজেদের মধ্যে সকল সুখ, দুঃখ ও কষ্ট ভুলে গিয়ে নতুন উদ্যমে নিজেদের মধ্যে সংহতি, একাত্মতা বৃদ্ধি পায়। পারস্পরিক হিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য সৃষ্টির দিন বিজয়া দশমী। অন্যায়, অবিচার ও সমাজের জন্য অকল্যাণকর কাজসমূহ ভুলে গিয়ে মায়ের সকল স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালবাসায় আবদ্ধ হওয়ার দিন শুভ বিজয়া। এদিনে সামাজিক সংহতি ও সৌহার্দ্য বোধেরও জন্ম নেয়। দুর্গা পূজা আমাদের আর্থ সামাজিক, পরিবার ও নৈতিক জীবন উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে থাকে।

দেবী দুর্গা জগতে সত্য, শান্তি, কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী দুর্গার কাছ থেকে ভক্তরা শান্তি, সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা পায়। এ থেকে ভক্তরা অন্যায়, অবিচারের পথ পরিহারের শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন।

দুর্গাপূজায় সকল সম্প্রদায়ের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ আজও লক্ষণীয়। এখানে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় যা সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্যের প্রতীক। এজন্য বিজয়ার মধ্যে দিয়ে ঘটে সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতির মেলবন্ধন। প্রমাণিত হয় ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।

পরিশেষে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা, যুগে যুগে বিজয়া দশমী হোক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন, বিজয়া দশমী হোক অন্যায়কে প্রতিহত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিন। শুভ বিজয়া।

লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!