নিজস্ব সংবাদদাতা :
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাজিপুর গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তৈরি করলো প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা ও খালের উপর কাঠের পুল। গত ডিসেম্বর থেকে আজ ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নানা বাঁধা পেরিয়ে বিরামহীন অক্লান্ত স্বেচ্ছাশ্রমে একাজের সমাপ্তি হয়।
গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে নগদা শিমলা ইউনিয়নের সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত গ্রাম হাজিপুর। এ গ্রামের পূর্বে বাইশকাইল, উত্তরে বনমালী আর দক্ষিণ-পশ্চিমে নবগ্রাম। প্রত্যেকের নিত্য দিনের যাতায়াত এ রাস্তা দিয়ে। কিন্তু একটি রাস্তা এবং হাজীপুর ও নবগ্রামের সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের উপর একটি সেতুর অভাবে গ্রামবাসি প্রতিনিয়ত দু:খ পোহাতো। প্রতিবেশি গ্রামের তুলনায় উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি এ গ্রামে। হাঁট-বাজার, স্কুল-কলেজ ও নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কাজেই যাতাযাত করতে হয় এ রাস্তা দিয়ে। আর এ জন্য গ্রামবাসীর একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় চলাচলের জন্য রাস্তা ও খালের উপর একটি সেতু।
হাজিপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আ. লতিফ জানান, যাতাযাতের জন্য ভালো কোনো রাস্তা ও খালের উপর একটি সেতু না থাকায় আমাদের বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। চোখের সামনে মুমূর্ষু রোগীকে মারা যেতে দেখেও আমাদের কিছু করার থাকেনা। কোনো ডাক্তারকে বাড়িতে আনতে পারিনা বা রোগীকে হাসপাতালেও নিতে পারিনা। চিকিৎসার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র যাতাযাতের ব্যবস্থা না থাকার কারণে আপনজনদের চিরতরে হারাতে হয়। যুগের পর যুগ অসহায় গ্রামবাসী এ সমস্যার কথা স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে বলেও কোন কাজ হয়নি। তারা সুযোগ সন্ধানীর মতো বার বার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের জন্য শুধু ভোট নিয়েছেন আর নির্বাচনে জয়ী হয়ে কেটে পড়েছেন। রাস্তা বা সেতুর কথায় তাঁরা আর কর্ণপাত করেননি। এ প্রসঙ্গে গ্রামের আরেক প্রবীন অবসর প্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমি ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি, আমার বাপ-দাদাসহ গ্রামের সকল স্তরের জনসাধারণ মিলেই স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের পিছে অনেক ছুটাছুটি করেছে। কিন্তু রাস্তা বা সেতু কোনটিই আজ পর্যন্ত কেউ করে দেয়নি। অবশেষে, গ্রামের প্রবিণ উদ্যোক্তা মো. আয়নাল হক সরকার, মো. সোহেল রানা ও গ্রামবাসীর ঐক্যজোট, সার্বিক সহযোগিতা ও স্বেচ্ছাশ্রমে এ অবহেলিত গ্রামেই নির্মিত হলো স্বপ্নের সেতু ও আবাদি জমির উপর দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা। আমাদের গ্রামবাসীর দাবি, শতাব্দী প্রাচীন এ গ্রামটি যাতে সরকার ঘোষিত ডিজিটালের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে পিছিয়ে পড়া গ্রামটির ঘরে ঘরে প্রযুক্তির সকল সুযোগ সুবিধা পৌছে দিতে যুগোপযোগী করে রাস্তা ও সেতুটি গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।