আজ || বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে প্রধানমন্ত্রীর ফেয়ার প্রাইজের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ       গোপালপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের পদত্যাগ       উত্তর টাঙ্গাইল নূরানী মাদরাসার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উদযাপন       গোপালপুরে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত       গোপালপুরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশু ও নারী নিহত       গোপালপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় সংসদ সদস্য ছোট মনির সংবর্ধিত       এ হয়রানির শেষ কোথায়! তদন্তে নির্দোষ, তবুও বন্ধ বেতনভাতা       গোপালপুরে ২০১ গম্বুজ মসজিদ চত্বরে পুলিশ বক্স স্থাপন    
 


উত্তর টাঙ্গাইলে বিএডিসির দুর্নীতির দরুন বোরো চাষীরা হয়রানির শিকার

‘অচল নলকূপ সচলকরণ প্রকল্প’ মুথ থুবড়ে পড়ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা :

বিএডিসির অব্যবস্থাপনার কারণে টাঙ্গাইলে ‘অচল নলকূপ সচলকরণ প্রকল্প’ গতি পাচ্ছেনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো চাষীরা। স্কীম পরিচালনা কমিটি নিয়ে জালিয়াতি ও দুর্নীতি করায় অবকাঠামোগত কাজ মুখ থুবড়ে পড়ছে। ফলে কোনো কোনো স্থানে সেচের অভাবে জমি পতিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিশেষ আগ্রহে ২০১২/১৩ সেচ বর্ষ থেকে দেশে প্রায় ২০ হাজার অচল গভীর নলকূপ সচল করণের প্রকল্প নেয়া হয়। এজন্য সরকার প্রায় ছয়শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে অচল গভীর নলকূপ সেচের উপযোগি করার জন্য ভূগর্ভস্থ সেচ পাইপ নির্মাণ করা হয়। সেচনাল ও অবকাঠামোগত কাজ শেষে বিনা খরচে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রিপেইড পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে কৃষকরা গভীর নলকূপ থেকে বোরো ও রোপা আমন মৌসুমে সুলভে সেচ দেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলায় ৪টি, গোপালপুর উপজেলায় ৭টি এবং মধুপুর উপজেলায় ৬টি গভীর নলকূপ এ পদ্ধতিতে চালু করা হয়েছে। এসব উপজেলায় আরো ১০টি নলকূপ চালুর পর্যায়ে রয়েছে। এ পদ্ধতি চালুতে সরকারের ব্যায় হয় প্রায় ৬/৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিএডিসির দুর্নীতির কারণে নলকূপের সেচ স্কীম পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে অনেক স্থানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এজন্য প্রকৃত কৃষকরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেমন ধনবাড়ি উপজেলার মুশুদ্দী ইউনিয়নের মুশুদ্দী দক্ষিন পাড়া ১১২ নং গভীর নলকূপ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে চলছে তুগলকী কান্ড। ওই গ্রামের আদর্শ কৃষক আরফান আলী মাস্টার টানা চার দশক ধরে ওই গভীর নলকূপ পরিচালনা করে আসছেন। বিএডিসির নিয়ম মেনে তিনি পরবর্তীতে নলকূপটি নিজ নামে কিনেও নেন। কিন্তু সেচের কমান্ড এরিয়া কমে যাওয়ায় এবং সেচের জমির সীমানা নিয়ে গ্রামীন কোন্দল দেখা দেয়ায় মাঝে কয়েক বছর নলকূপ বন্ধ হয়ে যায়।

কৃষক আরফান আলী অভিযোগ করেন, গ্রামের কৃষকদের অন্ধকারে রেখে বিএডিসি দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তারা বিপুল উৎকোচের বিনিময়ে পাড়ার দুই সেনা সদস্য এমদাদুল হক ও সেলিমুল ইসলামকে জালিয়াতির মাধ্যমে ম্যানেজার ও সভাপতি করে গোপনে স্কীম পরিচালনা কমিটি দাড় করায়। বিএডিসির ঠিকাদার ভূগর্ভস্থ সেচনালা ও আনুসঙ্গিক অবকাঠামোগত কাজ করতে গেলে চাষীরা টের পান। গ্রামবাসিরা ঠিকাদারকে নির্মাণ কাজে বাধা দেন। লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় ধনবাড়ি উপজেলা সেচ কমিটির নিকট। সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মীর ফারুখ আহমাদ বিষয়টি ফয়সালার জন্য গত ৯ আগস্ট গ্রামের কৃষকদের উপজেলা অফিসে ডেকে নেন। সেখানে উপস্থিত কৃষকদের সম্মতির ভিত্তিতে আরফান আলীকে ম্যানেজার এবং তোরাপ আলীকে সভাপতি করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট স্কীম পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।

নির্বিঘ্নে ও সুলভে সেচ পরিচালানার স্বার্থে উপজেলা চেয়ারম্যান মীর ফারুখ আহমাদ এ নতুন কমিটিকে অনুমোদন দিয়ে বিএডিসিকে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ করেন। কিন্তু বিএডিসি উপজেলা সেচ কমিটির এ সুপারিশ বাস্তবায়নে তালবাহানা শুরু করে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা ফ্যারকা তৈরি করে পূর্বের সাজানো কমিটির মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ চালানোর চেষ্টা করে বিএডিসি। গ্রামবাসির অভিযোগ, সাজানো কমিটির সভাপতি ও ম্যানেজার দুজনই সেনা সদস্য। সরকারি চাকরির কারণে তারা এলাকায় থাকেন না। নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি ও ম্যানেজারকে সেচ মৌসুমে স্কীম পরিচালনার স্বার্থে সর্বক্ষন এলাকায় থাকতে হবে। এটি জানা সত্বেও বিএডিসি স্কীম পরিচালনায় তাদেরকে জড়িত রেখে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। একপক্ষকে আদালতে পাঠিয়ে নিজেদের দুস্কর্ম আড়াল করতে চাইছেন।

নবগঠিত স্কীম ম্যানেজার আরফান আলী জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে সাজানো সেচ কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তারা। উপজেলা সেচ কমিটির সুপারিশ মোতাবেক স্কীম পরিচালনায় নতুন কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে বিএডিসি প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠে নামায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, চাকরিরত দুই সেনা সদস্যের তত্বাবধানে সাজানো স্কীম পরিচালনা কমিটি নিয়ে প্রকৃত চাষীরা প্রশ্ন তোলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চাষীদের অংশগ্রহনে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তিনি ওই বৈধ কমিটি নিয়ে কাজ করার জন্য বিএডিসিকে বলেছেন। কিন্তু বিএডিসি সাজানো কমিটি বহাল রেখে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারকে মাঠে নামিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছেন। এ ব্যাপারে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা বিএডিসির উপসহকারি প্রকৌশলী নূরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিএডিসির বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সঠিক নয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের পাঠানো কমিটি গ্রহন করে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!