আজ || বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে প্রধানমন্ত্রীর ফেয়ার প্রাইজের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ       গোপালপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের পদত্যাগ       উত্তর টাঙ্গাইল নূরানী মাদরাসার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উদযাপন       গোপালপুরে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত       গোপালপুরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশু ও নারী নিহত       গোপালপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় সংসদ সদস্য ছোট মনির সংবর্ধিত       এ হয়রানির শেষ কোথায়! তদন্তে নির্দোষ, তবুও বন্ধ বেতনভাতা       গোপালপুরে ২০১ গম্বুজ মসজিদ চত্বরে পুলিশ বক্স স্থাপন    
 


রাজনীতির হলিখেলা; জামায়াতের নতুন আমির

: সাইফুল শাহীন :

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সামনে শপথ গ্রহণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির নির্বাচিত হয়েছেন মকবুল আহমাদ। দলের রুকনরা গোপন ভোটের মাধ্যমে ২০১৭-২০১৮-২০১৯ কার্যকালের জন্য তাকে আমির নির্বাচিত করেন। কিন্তু দলের আমির নির্বাচিত হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মকবুল আহমাদের এর দেয়া বক্তব্য একদিকে যেমন দেশের রাজনৈতিক জল্প-কল্প টেবিল টকের রসদ যুগিয়েছে, অন্যদিকে স্বাধীনতা পরবর্তি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী নয় এমন ব্যাক্তির জামায়াতের আমীর হবার তর্ক-বিতর্কে জমে উঠেছে সমালোচকদের সংবাদ বাজার।

জামায়াতের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষনে জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের সর্বশেষ রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৯ সালে। এর পরে প্রতি তিন বছর পরপর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে চরম সংকটে থাকা দলটির পক্ষে তা আর সম্ভব হয়নি। যে কারণে ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল দিয়েই এতদিন চলে আসছিল দলের কার্যক্রম।

তবে একটু পেছন ফিরে তাকালে আরো পরিষ্কার হবে ইতিহাসটা। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল সে কথা সবারই জানা। কেবল বিরোধীতাই করেনি, পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানান সহযোগিতাও করেছে দলটির নেতারা। জামায়াত ও তাদের সেই সময়ের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ গড়ে তুলেছিল রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হবার পর আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয় জামায়াত নেতারা। ধীরে ধীরে নিষ্ক্রীয় হয়ে যায় দলের কার্যক্রম।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে পথ চলা শুরু করে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। আর একে একে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে পালিয়ে থাকা নেতেরা। সে সময় দলের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পাওয়া মাওলানা আবদুর রহিম এর নেতৃত্বে গোপনে শুরু হয় তাদের মাঠ গোছানোর কর্মকান্ড।

১৯৭৫ ‘র পর ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে জামায়াতকে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ দেন। সেই সুবাদে  ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন দলের আমির গোলাম আযম। গোলাম আযম পাকিস্তানের নাগরিক হবার কারণে প্রকাশ্যে আমিরের দায়িত্ব না নিতে পারলেও মূলত তিনিই ছিলেন দলটির মূল নেতা। সে সময় ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন আব্বাস আলী খান। কিন্তু পরবর্তীতে গোলাম আযমকে আমির ঘোষণা করা হলে, একজন পাকিস্তানি নাগরিককে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের আমির ঘোষণা করায় যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে শুরু হয় ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তীব্র আন্দোলন। পরবর্তীতে গোলাম আযম রাজনীতি থেকে অবসর নিলে আমির নির্বাচিত হন মতিউর রহমান নিজামী।

২০১০ সালে আওয়ামী সরকারের অধীনে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে আবারও ধীরে ধীরে কোণঠাসা হতে থাকে জামায়াতের পথচলা। বিচার ঠেকাতে শুরু করে নানা সহিংসতা। দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অভিযোগে রায় ঘোষণা ও কার্যকর হতে থাকলে তা আরও বেড়ে যায়। এসব সহিংসতার মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা হয় কারাগারে, নয়তো আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে ১৯৭১ এর পর ২০১১ সালে দ্বিতীয়বারের মত প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে আবারও আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায় জামায়াতের দলীয় কর্মসূচি। নিজামীসহ শীর্ষ জামায়াত নেতারা গ্রেপ্তার থাকার কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব নেন মকবুল আহমাদ।

নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বিগত সাত বছর সম্মেলন করতে না পারলেও বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল নতুন আমির নির্বাচনের কথা। সেই সাথে গুঞ্জন ছিল নতুন আমীর হবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগমুক্ত। তারই ধারাবাহিকতায় ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ নির্বাচিত হন জামায়াতের বর্তমান আমীর।

কিন্তু মকবুলকে আমীর করার মাধ্যমে, দেশের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়া জামায়াত তাদের বিরুদ্ধে থাকা প্রধান অভিযোগ যুদ্ধাপরাধী’র খোলস থেকে বেড়িয়ে নতুন লেবাসে মাঠের রাজনীতি সচল করার যে সুযোগ তৈরী করতে চেয়েছিল, তা বোধয় আর হলো না।

যুদ্ধাপরাধ অপরাধে অভিযুক্তহীন আমির ঘোষণায় জামায়াত এর নতুন পথচলার রাজনৈতিক রোড পারমিট প্রায় নিশ্চিত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকার কথা স্বীকার করেছে, এবার আর ঠেকায় কে?

কিন্তু নতুন একটি সংবাদ তাদের স্বপ্ন আশায় হতে পারে গুড়ে বালি। তা হলো, মকবুলের নিজ এলাকা ফেনির মানুষ নাকি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে নানা প্রমান সাপেক্ষে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মকবুলের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে তদন্তের কথা জিজ্ঞেস করায় ট্রইব্যুনাল জানিয়েছিল, “তার বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগই নাই, তাই তদন্তেরও কোনো প্রয়োজন নাই”। তবে কি তার এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করবেনা ট্রাইব্যুনাল? নাকি রাজনীতির হলি খেলায় প্রায় নিঃশেষ হয়ে পড়া জামায়াতকে শুদ্ধ লেবাসের খোলস পড়িয়ে মাঠে নামাবে নাটের গুরুরা?

সাইফুল শাহীন লেখক, সাংবাদিক

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!